, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


জালিমদের আবাসস্থল জাহান্নাম

  • আপলোড সময় : ০১-০৮-২০২৪ ১০:৪৮:৫৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৮-২০২৪ ১০:৪৮:৫৭ পূর্বাহ্ন
জালিমদের আবাসস্থল জাহান্নাম
আরবি শব্দ জুলুম অর্থ নির্যাতন বা অবিচার। সাধারণভাবে কারও হক বা প্রাপ্য থেকে তাকে বঞ্চিত করা, কারও অধিকার হরণ, কাউকে বিনা অপরাধে নির্যাতন কিংবা আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধনই জুলুম। আর যে ব্যক্তি এমন কর্মকাণ্ড করে তাকে জালিম বা অত্যাচারী বলা হয়। মহান আল্লাহ জালিমদের অপছন্দ করেন। তিনি ন্যায়বিচার পছন্দ করেন। হাদিসে এসেছে, সাফওয়ান ইবনু মুহরিয আল- মাযিনী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদিন আমি ইবনু উমর (রা.) এর সঙ্গে তার হাত ধরে চলছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বললো, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’য়ালা ও তার মুমিন বান্দার একান্তে কথাবার্তা সম্পর্কে আপনি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে কি বলতে শুনেছেন?

তখন তিনি (উমর রা.) বললেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’য়ালা মুমিন ব্যক্তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন এবং তার ওপর স্বীয় আবরণ দ্বারা তাকে ঢেকে নেবেন। তারপর বলবেন, অমুক পাপের কথা কি তুমি জানো? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার প্রতিপালক। এভাবে তিনি তার কাছ থেকে তার পাপগুলো স্বীকার করিয়ে নেবেন। আর সে মনে করবে যে, তার ধ্বংস অনিবার্য। তখন আল্লাহ তা’য়ালা বলবেন, আমি পৃথিবীতে তোমার পাপ গোপন করে রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দেবো। তারপর তার নেকের আমলনামা তাকে দেয়া হবে। কিন্তু কাফির ও মুনাফিকদের সম্পর্কে স্বাক্ষীরা বলবে, এরাই তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিল। সাবধান, জালিমদের ওপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ)। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২২৭৯)

তবে জুলুমের ক্ষেত্রে যেমন মাজলুমকে (আত্যাচারের শিকার ব্যক্তি) সাহায্য করার কথা এসেছে হাদিসে, তেমনি জালিম বা অত্যাচারীকেও সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমার ভাইকে সাহায্য কবো, সে জালিম হোক অথবা মাজলুম (অর্থাৎ জালিম ভাইকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে এবং মাজলুম ভাইকে জালিমের হাত থেকে রক্ষা করবে)। (সহিহ বুখারি, ২২৮১)
 
রাসুল (সা.) এ বিষয়ে আদেশও দিতেন। বারা ইবনু আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল (সা.) আমাদের সাতটি বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তারপর তিনি উল্লেখ করেন, পীড়িতের (রোগাক্রান্ত) খোঁজখবর নেয়া, জানাজার অনুসরণ করা, হাঁচির জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ্‌ বলা, সালামের জওয়াব দেয়া, মাজলুমকে (অত্যাচারিত ব্যক্তি) সাহায্য করা, আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দেয়া, কসমকারীকে দায়িত্ব মুক্ত করা। (সহিহ বুখারি, ২২৮৩)

অন্যদিকে, জালিমদের জন্য আখিরাতে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন মুআয (রা.) কে ইয়েমেনে পাঠান তখন তাকে বলেন, মাজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২২৮৬)

অপর হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, জুলম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকারের রূপ ধারণ করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২২৮৫)। খোদ মহান রবও জালিমদের জন্য ভয়ংকর শাস্তির কথা বলেছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আর জালিমরা শিগগিরই জানতে পারবে কোন প্রত্যাবর্তন স্থলে (জাহান্নাম) তারা প্রত্যাবর্তন করবে। (সুরা আশ-শু’আরা, আয়াত ২২৭)

অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, জালিমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি, যার লেলিহান শিখা তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে গলিত শিশার ন্যায় পানি দেয়া হবে, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে, কতই না নিকৃষ্ট পানীয়! আর কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল! (সুরা কাহাফ, আয়াত: ২৯)